মানবদেহকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রথমে দরকার দেহে জীবাণুর প্রবেশ বন্ধ করা। এ কাজে প্রতিবন্ধক হিসেবে ত্বক (skin) অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এ কারণে প্রথম সারির প্রতিরক্ষক হিসেবে ত্বক সুপরিচিত । এটি অন্যতম নন-স্পেসিফিক (non-specific) বহিঃস্থ প্রতিবন্ধক। যে প্রতিবন্ধক কোনো জীবিত বস্তুকে সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত না করতে পেরে তাকে জীবাণু মনে করে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে সে ধরনের প্রতিবন্ধককে অনির্দিষ্ট বা নন-স্পেসিফিক প্রতিবন্ধক বলে। নিচে দেহের প্রতিরক্ষায় ত্বকের ভূমকা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. ত্বকের বাইরের স্তরটি এপিডার্মিস (epidermis)। এটি একটি হর্ণি স্তর যা মৃত ও চাপা কোষে গঠিত এবং ফ্যাটাম কর্নিয়াম) (stratum corneum) নামে পরিচিত। এটি জীবাণুরোধী স্তর এবং ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের প্রবেশে ভৌত প্রতিবন্ধক (physical barrier) হিসেবে কাজ করে। কতকগুলো ভাইরাস ছাড়া এমন কোনো রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু নেই যা অক্ষত ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।
২. মানবত্বকে অক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সব সময়ই থাকে, কিন্তু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সেখানে বাচতে পারে না। কারণ তেকের খেদ বা সিবেসাস গ্রন্থি (scbaceous gland (ঘাম গ্রন্থি) (sweat gland) থেকে যথাক্রমে তেল ( স্বেদ) ও ঘাম ক্ষরিত হয় তা ত্বককে এসিডিক (pH 3.0-5.0) করে তুলে। এমন পরিবেশে জীবাণু বাঁচতে বা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। অন্যদিকে, ত্বকে যে সব অক্ষতিকর বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে সেগুলোও যে এসিড ও বিপাকীয় বর্জ্যা ত্যাগ করে সে সব পদার্থও ত্বকের উপরে ব্যাকটেরিয়া দমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। স্বেদ ও ঘাম অস্থির ক্ষরণেও জীবাণুনাশক (অ্যান্টিবায়োটিক) পদার্থ থাকে (যেমন –ডার্মিসাইডিন নামে পেপটাইড)। এসব পদার্থ থাকায় মানুষের ত্বক আত্ম-রোগজীবাণুনাশক অঙ্গ (self-disinfecting organ) হিসেবে কাজ করে।
৩. মানুষের দেহগাত্রে স্বাভাবিকভাবে রসবাসরত ব্যাকটেরিয়া অন্যান্য অণুজীবের সংক্রমণ সম্ভাবনা থেকে দেহকে করে । যেমন-যোনিতে যে ব্যাকটেরিয়া বাস করে তা ল্যাকটিক এসিড। ক্ষরণ করে pH মাত্রা কমিয়ে দেয়। কেউ অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে এসব ব্যাকটেরিয়া মারা যেতে পারে, ফলে যোনিদেশে pH বেড়ে যায় এ সুযোগে সেখানে Candida বা অন্যান্য অণুজীবের বংশবৃদ্ধি ঘটে ক্ষতরোগের সৃষ্টি করে।
৪. ত্বক কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশ ও অভ্যন্তরীণ টিস্যুতে সংক্রমণের আশংকা বহুগুণ বেড়ে যায়। কাটা স্থান দিয়ে নির্গত রক্ত জমাট বেঁধে শুধু যে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে ভাই না, বাইরে থেকে অণুজীব প্রবেশেও বাঁধা দেয়। দ্রুত ও আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে এ প্রাকৃতিক চিকিৎসা অত্যন্ত কার্যকর।
৫. দেহের সিক অংশগুলো সবসময় কোনো না কোনো ব্যাকটেরীয় সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। অনেক অংশ আবার ব্যাকটেরিয়ানাশকও বহন করে, যেমন- অশ্রু, নাসিকাঝিল্লি ও লালায় লাইসোজাইম (lysozyme); (সিমেনে স্পার্মিন (spermin) দুধে ল্যাক্টোপার অক্সিডেজ (Netoperoxidase) ইত্যাদি ।
৬. কানের ভেতরে সিরুমিনাস গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত সিরুমেন বা কানের মোম কানের গভীরে ধূলা-বালি, ব্যাকটেরিয়া ও ছোট পোকার প্রবেশ প্রতিরোধ করে। সিরুমিনাস গ্রন্থি কর্ণকুহরে এক ধরনের ত্বর্কীয় গ্রন্থি।
আরও দেখুন...